আজকাল বাজারে খুব সহজেই যে সামদ্রিক সামুদ্রিক মাছটির দেখা মেলে সেটি হচ্ছে টুনা মাছ। দামেও বেশ সস্তা। এছাড়া বড় পরিসরের মুদি দোকানে কৌটাজাত টুনা মাছ বিক্রি করতেও দেখা যায়। যা অনেকেই ক্রয় করেন।
টুনা মাছ দিয়ে বিভিন্ন পদের মজার মজার খাবার তৈরি করা যায়। দেখা যায়, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে টুনা মাছের স্যান্ডউইচ কিংবা বার্গার থাকে। অনেকেই আবার টুনা মাছের কাবাব খেতেও বেশ পছন্দ করেন।
টুনা মাছের উপকারীতা,টুনা মাছের উপকারিতা,টুনা মাছ,মাছের উপকারিতা
কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, পাশাপাশি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও মিলবে এই চর্বিহীন মাছ থেকে। চলুন জেনে নেয়া যাক ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর টুনা মাছের আরও কিছু বিস্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে-
আরো পড়ুন: দ্রুত বীর্য পাতের ইসলামিক চিকিৎসা,দ্রুত বীর্য পাতের স্থায়ী চিকিৎসা ওষুধ
টুনা মাছ কি?
টুনা মাছ সামুদ্রিক মাছ।টুনা মাছের লম্বা সাধারণত ৩০ সেমি-৪.৫ মিটার।টুনার বেশিরভাগ প্রজাতি ৩-৫বছর বাঁচে,কিন্তু কিছু কিছু ২দশকের বেশি বেঁচে থাকে।এর স্বাদ এর জন্য এটি নানা ধরনের খাবার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।এটির যেমন স্বাদ তেমনই সস্তা আর খুব স্বাস্থ্যকর।
আরো পড়ুন: ম্যাজিক কনডম ব্যবহারে সুবিধা ও অসুবিধা কি
টুনা হচ্ছে স্কমব্রিডি পরিবারের বিভিন্ন প্রজাতির খাদ্যোপযোগী সামুদ্রিক মাছ। পাঁচটি বর্গে টুন্নিনি পনেরটি প্রজাতিতে বিভক্ত।
ব্যুৎপত্তি
“টুনা” শব্দটি শেষ পর্যন্ত প্রাচীন গ্রিকের মধ্য লাতিন রূপ থুনাস থেকে উদ্ভূত: θύννος, রোমানাইজড: (থ্যাননোস), লিট। ‘টুনি-ফিশ’ – যা ঘুরে দেখা যায় θύνω (থানা) থেকে প্রাপ্ত, “ভিড়, ডার্ট বরাবর”
তবে ইংরেজিতে টুনা শব্দের তাৎক্ষণিক উৎস হল আমেরিকান স্প্যানিশ <স্প্যানিশ অ্যাটন <আন্দালুসিয়ান আরবি এট-টান, আল-টান التون [আধুনিক আরবি التن] থেকে একীভূত: ‘টুনা ফিশ’ <উপরে বর্ণিত গ্রিকো-ল্যাটিন থানুস।
আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন জাপানিরা অনেকের চেয়ে বেশী স্বাস্থ্যবাণ এবং দীর্ঘজীবি হন। এর কারণ তারা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খান এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার তেমন খান না। জাপানিদের খাবার তালিকায় রয়েছে প্রচুর টুনা মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। তারা এসব মাছ খায় সুশি হিশেবে অথবা সেদ্ধ বা গ্রিল করে।
আরো পড়ুন: শরীরের ভেতর কনডম আটকে গেলে কী করবেন?
টুনা বিদেশী মাছ কিন্তু এখন এটা বাঙালীর খাবারের তালিকায় আস্তে আস্তে দিব্যি ঠাই করে নিচ্ছে। সুপার শপগুলোতে ক্যানে থাকা টুনা বা ফ্রোজেন টুনা পাওয়া যায়। এই দু’ধরণের টুনাই উপকারি। টুনা মাছ মুড ভাল রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, পেটে অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং চুল ভাল রাখে।
টুনায় আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, সেলেনিয়াম (selenium), এবং ভিটামিন ডি। এখন জেনে নেয়া যাক টুনার স্বাস্থ উপকারিতা কি কি।
১। ত্বকের জন্য টুনা
টুনা মাছে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্র (ময়েশ্চারাইজ) করে এবং ত্বককে কোমল রাখে। তাই চকচকে স্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে আপনার খাবার তালিকায় অবশ্যই টুনা রাখুন।
২। রোগ প্রতিরোধে টুনা
টুনা ফিশ-এ আছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ভিটামিন এ এবং সেলেনিয়াম, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
৩। হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টুনা
হাড়কে শক্ত রাখতে এবং হাড় ভাঙ্গা ও ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে টুনায় থাকা ভিটামিন বি বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই ডায়েট চার্টে টুনা রাখুন এবং এর ফলাফল দেখুন।
৪। ওজন কমাতে টুনা
অতরিক্ত ওজন বর্তমানে একটি বড় সমস্যা। আমরা মজার খাবার খেতে চাই কিন্তু সাথে চাই স্লিম ফিগার। টুনা পারে আমাদের এ সমস্যা সমাধান করতে। টুনায় থাকা লো ফ্যাট, লো ক্যালিরি এবং প্রোটিন ওজন কমাতে সহায়ক।ক্যানের টুনা মাছ
আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার দোয়া,মাথা ব্যথা দূর করার দোয়া
৫। হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় টুনা
টুনায় থাকা ওমেগা-৩ রক্তের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং কোলেস্টেরল কমায়। ফলে হার্ট যথাযথভাবে কাজ করতে পারে।
৬। উচ্চ রক্তচাপ কমায় টুনা
টুনা মাছে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। ওমেগা-৩ এবং পটাশিয়াম যৌথভাবে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে সচল রেখে রক্তচাপ কমায় এবং হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমায়। বিস্তারিত: স্থূলতা কতটা মারাত্মক
৭। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় টুনা
টুনায় থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের সাথে যুদ্ধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত টুনা খেলে তা কিডনি ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৮। শক্তি উৎপাদনে টুনা
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে টুনা। ফলে আমরা অনেক বেশী শক্তিসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যবান থাকতে পারে।
৯। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে টুনা
টুনা মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বয়সজনিত চোখের রোগ ম্যাকুলার ডিজেনারেশান (macular degeneration) রোধ করে। এই ধরনের অসুখ ডায়াবেটিসের কারণে হয়। টুনা ডায়াবেটিক রেটিনা ক্ষয় থেকে চোখকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: মেয়েদের যৌন চাহিদা বাড়ানোর ওষুধ
এছাড়া আরো জানুন
টুনা মাছের উপকারিতাঃ স্বাস্থ্য সচেতনদের খাবার মেনুতে মাছের কদর তিনবেলা। আর সেটা যদি হয় সামুদ্রিক মাছ, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। টুনা মাছে রয়েছে খাদ্য উপাদনের বেশ কয়টি প্রয়োজনীয় উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। টুনা মাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে নাহ কখনই। দেখা যাক, কেন টুনা মাছ আমাদের
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
১.টুনা মাছ থেকে যে ক্যালরি পাওয়া যায়, তা ক্ষতিকর চর্বিমুক্ত। মাছের ক্যালরি নির্ভর করে চর্বির মাত্রার ওপর। ডিম পাড়ার সময় হলে মাছের দেহে তেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন ক্যালরির মাত্রাও বাড়ে। পুষ্টিচাহিদা মেটাতে মাছ তাই খুবই কার্যকর।
২.টুনা মাছে পর্যাপ্ত আমিষ আছে। মাংস থেকে আমিষ পেতে হলে এর সঙ্গে ক্ষতিকর চর্বি বা সম্পৃক্ত চর্বিও গ্রহণ করতে হয়। মাছের ক্ষেত্রে এ সমস্যা নেই, বিশেষ করে শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আমিষের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন মাছ বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রতি সপ্তাহে একজন মানুষের ১৭৫০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রয়োজন বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।
৪. আমিষ ও ওমেগা ৩ চর্বি ছাড়াও মাছে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন: সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস ইত্যাদি, যা বিপাক ক্রিয়া, দাঁত, পেশি ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। ছোট কাঁটাযুক্ত মাছ ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
আরো পড়ুন: ধাতু দূর্বলতার সমস্যা ও সমাধান
এছাড়াও টুনা মাছ খেলে যে উপকার পাওয়া যায়
১. রক্তস্বল্পতা (Anemia): টুনা মাছে উচ্চমাত্রায় আয়রন আছে,এতে থাকা ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স লোহিত রক্ত কনিকা গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।আয়রনের ওভাব হলে ব্যক্তি সহজেই অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে।
২. অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): এছাড়াও টুনা মাছ ইনফ্লামেটরি ডিজিজ যেমন-আর্থ্রাইটিস, বাতের মতো রোগ সারাতে সাহায্য করে।
৩. উচ্চ রক্তচাপ (High blood pressure): উচ্চ পটাশিয়াম এবং কম সোডিয়াম যুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: সকাল বেলার প্রসাবের সাথে বীর্য যাচ্ছে
৪. কোলোন ক্যান্সার: টুনা মাছে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপাদান যেমন- সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।বিভিন্ন গবেষনা থেকে দেখা গেছে যে, টুনা মাছের এই উপাদান গুলো স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, অন্য একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে, এটি কিডনি ক্যান্সারের বিরূদ্ধে বেশ উপকারি।সেলেনিয়াম হল সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি-রেডিকেলের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ করে এবং পূর্বের ক্ষতিকর কোষ গুলিকে রক্ষা করে।
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট
স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ